এ মরণযাত্রা বন্ধ হোক

0
19

বৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার প্রায় সব পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অনেকেই অবৈধ উপায়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে তারা প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার সময় তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া ৮ বাংলাদেশির মরদেহ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গত শুক্রবার কফিনবন্দি লাশগুলো দেশে ফেরে। অবৈধপথে বিদেশযাত্রায় মৃত্যুর খবর নতুন নয়। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও স্বপ্নের হরিণ ধরতে ঝুঁকি নিয়ে আফ্রিকার দেশ লিবিয়া থেকে ইউরোপে প্রবেশ করছেন বাংলাদেশিসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের অভিবাসীরা। গত ১৪ জানুয়ারি মাদারীপুরের রাজৈর ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বেশ কয়েকজন যুবক ইতালির উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। প্রথমে তারা দুবাই হয়ে আকাশপথে লিবিয়া পৌঁছান। পরে ১৪ ফেব্রুয়ারি লিবিয়া থেকে দালালের মাধ্যমে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালির উদ্দেশে রওনা হন। মাঝপথে তিউনিসিয়ায় ভূমধ্যসাগরে নৌকায় তাদের নির্যাতন করা হয়। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ রাতে জুয়ারা উপকূল থেকে ইউরোপে যাত্রাপথে ৫২ জন যাত্রী এবং একজন চালকসহ নৌকাটি তিউনিসিয়ার উপকূলে ডুবে গেলে ৪৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ছিলেন ২৭ বাংলাদেশি, পাকিস্তানের ৮, সিরিয়ার ৫, মিসরের ৪ জন। নিহত ৯ জনের মধ্যে ৮ জন বাংলাদেশি ও অন্যজন পাকিস্তানের নাগরিক বলে শনাক্ত হয়েছে। এমন ঘটনা দুঃখজনক। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্য মতে, ভূমধ্যসাগর ব্যবহার করে ইউরোপে প্রবেশকারীর সংখ্যায় বাংলাদেশিদের অবস্থান চতুর্থ। গত ১০ বছরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যেতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৯ হাজারের বেশি মানুষ। ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যানবিষয়ক দপ্তর ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১০ বছরে ১ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি ইউরোপের দেশগুলোতে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছেন। ইতালির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে গত সোমবার পর্যন্ত ইতালির বিভিন্ন বন্দরে ১ হাজার ৭৫১ জন অভিবাসী পৌঁছেছেন। ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে লিবিয়া থেকে ইউরোপে যাওয়ার পথটি হচ্ছে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। গত ৫ বছরে ওই পথ দিয়ে ইতালি যাওয়ার সময় প্রতি ৭০ জন মারা গেছেন। বিদেশ গমনেচ্ছুদের দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হওয়ার ঘটনা প্রায় ঘটছে। মৌখিক প্রচারণায় বলা হয় শিপ দিয়ে তারা ইউরোপের মানবাধিকার দেশ ইতালিতে পাড়ি জমান। বাস্তবতা হলো, শিপ নয় এ যেন মৃত্যুর এক ফন্দির নাম প্লাস্টিকের বোর্ড। প্রত্যক্ষদর্শী এমন অনেকেই আছেন ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন। অবৈধভাবে ঝুঁকিপূর্ণ পথে বিদেশযাত্রা রোধে ও দালাল প্রতারকদের দৌরাত্ম্য কমানোর ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় জনশক্তি রপ্তানির উদ্যোগ বেশ আশার আলো দেখিয়েছিল। কিন্তু তা কাক্সিক্ষত মাত্রায় কার্যকর না থাকায় এসব অবৈধ তৎপরতা থামেনি। অবৈধপথে বিদেশযাত্রা রোধ ও বিদেশে নিরাপদ কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার জন্য বৈধপথে কম খরচে প্রবাসে কর্মসংস্থানের সরকারি উদ্যোগে গতি আনা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মী প্রেরণ নিশ্চিত করা জরুরি। প্রায় ৮ বছর ধরে কোনো বাংলাদেশি অভিবাসী ইতালিতে বৈধভাবে প্রবেশ করতে পারছে না। ইতালির শ্রমবাজার নতুন করে উন্মুক্ত করার ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগী হলে অবৈধপথে যাত্রাও কমে আসবে বলে মনে করছি।