১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

যশোরে ১০ স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ, ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক

নিজস্ব প্রতিনিধি
যশোর-৩ (সদর) আসনে ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে ১০টি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ভোটের আগের দিন শনিবার রাত ১০টা থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকার কেন্দ্রগুলোতে এই ঘটনাগুলো ঘটেছে। এসব ঘটনায় কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক আনসার সদস্য আহত হয়েছেন।
স্থানীয় ভোটাররা জানিয়েছেন, ভোট কেন্দ্রগামী ভোটারদের মাঝে আতাঙ্ক সৃষ্টির জন্য এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী টানা দুই বারের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল ও ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র মোহিত কুমার নাথসহ ১০ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে নৌকা ও ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে এই আসনে লড়াইয়ের আভাস মিলেছে।
স্থানীয় ভোটার ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যশোর শহরের শংকরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রে ককটেল বোমা বিস্ফোরণ করেছে দুবৃর্ত্তরা। রোববার ভোট শুরু হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক আনসার সদস্য আহত হয়েছে। আহত আনসার সদস্য হলেন মণিরামপুর উপজেলার এড়েন্দা গ্রামের মোতালেব হোসেনের ছেলে মারুফ হোসেন (২২)।
শংকরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং অফিসার আব্দুর রহিম বলেন, সকাল থেকে কেন্দ্রটি স্বাভাবিক ছিল। হঠাৎ করে ভোট শুরুর আধা ঘণ্টা আগে ককটেল বোমা বিস্ফোরণ করে দুবৃর্ত্তরা। এতে এক আনসার সদস্য আহত হয়েছেন। তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, কেন্দ্রে ভোটাদের আতঙ্ক সৃষ্টির লক্ষে দুবৃর্ত্তরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এখন ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যা রাত ৭টার দিকে যশোর শহরতলীর শংকরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে ককটেল বোমা বিস্ফোরণ করে দুর্বৃত্তরা। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই এলাকার সরকারি এনএম খান প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের পেছনে পরপর তিনটি ককটেল নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া এদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে যশোর শহরের বকচর এল মার্কেটসংলগ্ন এলাকায় যশোর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহিত কুমার নাথের (ঈগল) কার্যালয়ের সামনে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় হাতেনাতে এক যুবককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয়রা। এর আগে নওয়াপাড়া ইউনিয়নে কিসমত নওয়াপাড়ার মেহগনি তলাকেন্দ্রে ককটেল নিক্ষেপ করে দুবৃর্ত্তরা।
এদিকে নির্ধারিত সময় সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ। কনকনে শীত উপেক্ষা করে ভোর থেকেই ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা উপস্থিত হন। তবে শহরের জিলা স্কুল, আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ, কালেক্টরেট স্কুলসহ পাঁচটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে ভোটারদের উপস্থিতি কম। এসব এলাকার কয়েকজন ভোটাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোট গ্রহণের আগের রাতে শহরের বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাতে এক ধরণের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে ভোটারের উপস্থিতি কিছুটা কমেছে।রোববার সকাল ১০ টার দিকে শহরের শংকরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটাদের কোনো লাইন দেখা যায়নি। যারা ভোট দিতে আসছেন, দ্রুত ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছেন।
এই কেন্দ্রের ভোটার নজরুল ইসলাম বলেন, এখনো ভোট দেয়নি। ভোটের আগের রাতে ও ভোটের দিন সকালে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে এলাকার ভোটাদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই আসেনি ভোট দিতে। পরিবেশ ভালো হলে ভোট কেন্দ্রে যাবো। এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আব্দুর রহিম বলেন, এই কেন্দ্রে চার হাজার ৪৩ ভোটার। ভোট গ্রহণের দুই ঘণ্টায় ১৬০টি ভোট গ্রহণ করা হয়েছে।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোরের ৬টি সংসদীয় আসনে ভোটযুদ্ধে ৩২জন প্রার্থী লড়ছেন। নৌকার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র ৮ প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। ভোটে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে মূল লড়াইয়ের আভাস মিলছে। জেলায় ৮২৫টি ভোটকেন্দ্রে ৫ হাজার ২১৭টি ভোট কক্ষে ২৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫৫ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার হলেন ১১ লাখ ৭৬ হাজার ১০৫ জন নারী ১১ লাখ ৬২ হাজার ৯৩৫ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার হলেন ১৫ জন।
বিভিন্ন আসনে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে নানাভাবে শাসানো, হুমকি-ধমকি দেওয়া, এমনকি প্রাণনাশের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের পরিবেশে উত্তাপ ছড়িয়েছে যশোরের পাঁচটি আসনেই। ফলে জেলার ছয়টি আসনের ৮২৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৭৫টিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। যা মোট কেন্দ্রের প্রায় ৩৫ শতাংশ। এসব কেন্দ্রগুলো বিশেষ নজরদারিতে রাখছে পুলিশ-প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা। সাধারণ ভোটকেন্দ্রের তুলনায় গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।
যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়াদ্দার বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত করা হলেও আমরা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছি না। নির্বাচনে নিরাপত্তা দিতে ২৫০০ পুলিশ সদস্য, ১০ হাজার আনসার সদস্য, ৪৫০ বিজিবি সদস্য, সেনা সদস্য, ম্যাজিস্ট্রেটসহ গোয়েন্দা বাহিনীর ১৬ হাজার সদস্য নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া সাদা পোশাকে গোয়েন্দাবাহিনী কাজ করছে। নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো রয়েছে যশোরের সকল কেন্দ্র।
যশোরের পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্র দখল, ভোটকক্ষ দখল, ভোট কাটা, ভোটের পরিবেশ নষ্ট করা এ ধরণের চিন্তা যদি কেউ করেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ যদি নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের ছক করেন তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়