আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করুন

0
20

বেইলি রোডে দুর্ঘটনা আমাদের আরেকবার জানিয়ে দিল, ঢাকা শহরে আমরা জীবন নিয়ে কতটা অনিশ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছি। ঘরে, অফিসে, দোকানে, রাস্তায়, বাসে, ট্রেনে কোথাও আমরা কেউ নিরাপদ নই। কখন কার জন্য মৃত্যু কোথায় ফাঁদ পেতে আছে- আমরা কেউ জানি না। আর এই মৃত্যুফাঁদ থেকে আমাদের বাঁচানোর কোনো কার্যকর উদ্যোগও চোখে পড়ে না। দিনটি ছিল ২৯ ফেব্রুয়ারি; ৪ বছর পর দিনটি আমরা একবার দেখতে পাই। দিনটিকে স্মরণীয় করার জন্য আমরা সবাই যখন নানা আয়োজনে ব্যস্ত তখন ঢাকার বুকে নেমে আসে শোকের ছায়া। রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের কথা বলছি, এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন ২২ জন। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৭৫ জনকে। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে ভবনটিতে আগুন লাগে। আগুন নেভানোর পর হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন শেষে পিবিআই ধারণা করেছে, গ্যাসের লাইন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, প্রথমে ভবনের নিচতলায় আগুন লাগে। তারপর দোতলায় লাগে। পরে তা মুহূর্তের মধ্যেই ভবনজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ভবনের ভেতরে বড় বড় গ্যাস সিলিন্ডার ছিল। সেগুলোতে আগুন ধরে যাওয়ায় লোকজন বের হতে পারেননি। আগুন ধরার কিছু সময় পর এক এক করে সিলিন্ডার ব্লাস্ট হচ্ছিল। ভবনের পুরো ভেতরটা ধোঁয়ায় ঘেরা ছিল, বাইরেও ধোঁয়া বেরিয়ে আসছিল। এর কিছুক্ষণের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। এর পাশাপাশি ক্রেনের সাহায্যে ভবনের ওপরের তলা থেকে মানুষকে নামিয়ে আনতে থাকে। গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মারা গেছেন মোট ৪৬ জন। গুরুতর আহত রয়েছেন ১২ জন। তাদের কেউ শঙ্কামুক্ত নন। তাদের বেশির ভাগের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। যারা বেঁচে আছে তাদের বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সবাইকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাইরে কেউ আছেন কিনা, সে তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। আগুন লাগা বহুতল ভবনটির নির্মাণ ত্রæটির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সেখানে কোনো ফায়ার এক্সিট ছিল না। নিয়ম মেনে ভবন নির্মাণের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, আপনারা অন্ততপক্ষে যখন ঘরবাড়ি তৈরি করেন, একটু খোলা বারান্দা, ফায়ার এক্সিট বা ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা করবেন। তিনি আরো বলেন, আমরা ফায়ার এক্সটিংগুইশার লাগানো, অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে বারবার নির্দেশ দিচ্ছি। সেটা কিন্তু কেউ আর মানে না। বলছিলাম ঝুঁকির কথা, ঢাকা শহরে আমরা যে কেবল আগুনে পুড়ে মরার ঝুঁকির মধ্যে বাস করি তা নয়। আমাদের মাথার ওপরে যে কোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে কোনো না কোনো বাড়ি, ভবন বা দেয়াল। কারণ ভবন নির্মাণে আমরা কোনো নিয়মকানুন মানি না, মানতেও হয় না, কারণ আমরা সবকিছু ম্যানেজ করি, ম্যানেজ করে ফেলতে পারি। রাজধানী ঢাকায় আমরা এ রকম ধারাবাহিক দুর্ঘটনা আর চাই না। অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের প্রতি জানাই গভীর শোক ও তাদের পরিবারের প্রতি জানাই সমবেদনা। আশা করি, অগ্নিকাণ্ডে আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সরকার যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।