লোডশেডিং সহনীয় রাখতে হবে

0
9

বিদ্যুৎ উৎপাদনে সম্পূর্ণ সক্ষম থাকার পরও লোডশেডিং কমেনি বরং বাড়ছে। দেশে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ চলছে। এর মধ্যে লোডশেডিংয়ে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। বিদ্যুৎ খাতে সক্ষমতা অর্জনে প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে, আরো হচ্ছে। যার ফলে জাতীয় গ্রিডে আরো নতুন সক্ষমতা যোগ হতে যাচ্ছে, তাহলে বিদ্যুৎ গ্রাহকের ভাগ্য বদল কবে হবে। এমন প্রশ্ন বারবার আসছে। উত্তর মিলবে কোথায়? কিন্তু বিদ্যুতের প্রাথমিক উৎস গ্যাস, কয়লা ও তেলের সংস্থান করেনি। স্থলভাগ ও সমুদ্র উপকূলে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের চেষ্টা না করে জ্বালানি আমদানিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। সরকারি মহল থেকে বলা হচ্ছে, গরম কমলে কিংবা বৃষ্টি হলে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাবে। জ্বালানি খাতে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও যদি প্রকৃতির খেয়ালের ওপর নির্ভর করতে হয়, তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে? গণমাধ্যমে খবর আসছে, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়ায় কয়েকশ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিং নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ে ভুগছে মানুষ। এছাড়া গ্রামাঞ্চলে ব্যাহত হচ্ছে শেষ মুহূর্তের সেচ কার্যক্রম। কৃষকের সেচ কার্যক্রম ঠিক রাখতে আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে গ্রামাঞ্চলের লোডশেডিং পরিস্থিতি কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ বিভাগের একটি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট। সরকারি হিসাবে বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদা প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু দিনে উৎপাদন হচ্ছে ১২ হাজার ও সন্ধ্যায় ১৪ হাজার মেগাওয়াট। যদিও বেসরকারি হিসাবে এই ঘাটতি আরো বেশি। জ্বালানি সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন করতে না পারায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ না বাড়লে সামনে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হতে হলে তেল, গ্যাস ও কয়লার সরবরাহ নির্বিঘœ করতেই হবে। বর্তমানে সাধারণ মানুষের কাছে এটা একটা বড় প্রশ্ন, আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনে সম্পূর্ণ সক্ষম থাকার পরও কেন আমাদের দিনের পর দিন লোডশেডিংয়ের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। দেশে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায়ও সমস্যা রয়েছে। দেশের অধিকাংশ স্থানে বিদ্যুৎ বিতরণ লাইনের অবস্থা বেহাল ও জরাজীর্ণ। সঞ্চালন লাইনে বড় ধরনের বিভ্রাটের কারণে দেশের প্রায় অর্ধেক অংশ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছিল- এমন নজিরও আছে। সঞ্চালন লাইন শক্তিশালী করতে নেয়া প্রকল্পগুলোর সার্বিক অগ্রগতি সন্তোষজনক না হলে আগামী দিনে দেশবাসী বিদ্যুৎ খাতের প্রকৃত সুফল থেকে বঞ্চিত হবে। প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক সভ্য জগতের অপরিহার্য অনুষঙ্গ বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ ছাড়া এক মুহূর্তও স্বস্তিতে থাকার বিষয় কল্পনাও করা যায় না। বিশ্বের সব দেশই বিদ্যুতের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। গুরুত্ব বিবেচনায় আমাদের সরকারও দেশের শতভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। এই সাফল্যের সঙ্গে সবার চাহিদামতো বিদ্যুৎপ্রাপ্তির বিষয়ও নিশ্চিত করতে হবে।