কিডনি সুরক্ষায় বিমা সময়ের দাবি

0
23

দেশে কিডনি রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ৮০ লাখ। তাদের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষের কিডনি বিকল। তারা ডায়ালাইসিস নিয়ে বেঁচে আছেন। এমন পরিস্থিতিতে কিডনি রোগীদের জন্য বিমা চালুর বিষয়টি সামনে আসছে। রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক গোলটেবিল বৈঠকে সরকারি কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এসব তথ্য তুলে ধরেন। তারা বলেন, মাত্রাতিরিক্ত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কেমিক্যালযুক্ত ভেজাল খাবার ও পরিবেশ দূষণের কারণে দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বর্তমানে বিশ্বে ৮৫ কোটির অধিক লোক দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত। দুঃখজনক হলেও সত্য, তাদের মধ্যে ৭৫ কোটি রোগী জানে না, মরণঘাতী কিডনি রোগ নীরবে তাদের কিডনি নষ্ট করে চলেছে। প্রতি বছর ১ কোটি ৩০ লাখ লোক আকস্মিক কিডনি বিকল রোগে আক্রান্ত হন, যার ৮৫ শতাংশই আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগীর হার ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ। কিডনি রোগের শেষ পরিণতি কিডনি বিকল। একবার কিডনি বিকল হয়ে গেলে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় কিডনি সংযোজন অথবা ডায়ালাইসিস। কিন্তু এই চিকিৎসা এতটাই ব্যয়বহুল, ১০ শতাংশ কিডনি বিকল রোগীও তা বহন করতে পারে না। তাই আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রায় ৯০ শতাংশ রোগী বিনা চিকিৎসায় অথবা আংশিক চিকিৎসায় মারা যান। গোষ্ঠী ও সামষ্টিক সহায়তা ছাড়া কিডনি বিকল রোগের যথাযথ চিকিৎসা পুনর্বাসন কখনোই সম্ভব নয়। কিডনি রোগী বিশেষ করে কিডনি বিকল রোগীরা যাদের ডায়ালাইসিসের বা কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়, তাদের সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। তাই এদিকে যেমন প্রতিরোধ কার্যক্রম চালাতে হবে, সমান্তরালভাবে চিকিৎসা পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও নিতে হবে। আশার কথা, দেশের একজন চিকিৎসক ১ হাজারের বেশি কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন। তাকে অনুসরণ করে দেশের অন্যান্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উচিত এমন দৃষ্টান্ত স্থাপনে আরো তৎপর হওয়া। কিডনিদাতা ও গ্রহীতাকে দীর্ঘ সময় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হয়। দেশের গরিব মানুষ যাতে এ রোগের মানসম্মত চিকিৎসা পেতে পারে, সে জন্য সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। উন্নত দেশগুলোতে ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন স্বাস্থ্য বিমার মাধ্যমে হয়। রোগীর পকেট থেকে দিতে হয় না। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আংশিক খরচ সরকার বহন করে থাকে। আমরা আশা করছি, সরকার শিগগির দেশে ‘কিডনি সুরক্ষা বিমা’ চালুর বিষয়ে উদ্যোগী হবেন। ফলে হয়তো কিডনি রোগীদের মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হবে এবং সবাইকে চিকিৎসার আওতায় আনা যাবে। বর্তমানে চিকিৎসার ব্যয় বেড়েই চলেছে। এতে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। কাজেই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত জরুরি। আমরা জানি, অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতেও সরকার ব্যয় বাড়িয়েছে। এর বাস্তবায়ন দেখতে চাই। মোটকথা, চিকিৎসা খাতে জনগণের খরচ কমাতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ ও বরাদ্দকৃত অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।