বাড়ছে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ

0
13

দেশের বিভিন্ন স্থানে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা বাড়ছে। বাড়ছে প্রাণহানির সংখ্যা। দিন দিন বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এ ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও সিলিন্ডারের ব্যবহারসহ ত্রæটিপূর্ণ যন্ত্রাংশকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, একটি সিলিন্ডার ন্যূনতম ২০ বছর ব্যবহার করার কথা থাকলেও ১০ বছর অন্তর এটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে হবে। এছাড়া এ সময়ের মধ্যে কয়েক দফায় রেগুলেটর ও ভালভ পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু দায়িত্বশীলদের পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের উদাসীনতায় প্রতিদিনই বাড়ছে দুর্ঘটনা। সর্বশেষ গাজীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় আরো ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১০ জনে।। গত ১৩ মার্চ বিকেলে গাজীপুরের কোনাবাড়ির তেলিরচালা টপস্টার এলাকায় গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী শিশুসহ ৩৬ জন দগ্ধ হন। দগ্ধদের উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। দগ্ধ সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের প্রত্যেকের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। ৮০ শতাংশের বেশি দগ্ধ তারাও আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর বেইলি রোডের চরম বিয়োগান্ত অগ্নিকাণ্ডেও সিলিন্ডার বিস্ফোরণকে প্রাথমিকভাবে দায়ী করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর আগে বিভিন্ন স্থানে সিলিন্ডার গ্যাসের কারণে বেশ কয়েকটি অগ্নিকাণ্ড ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, এসব অঘটন থেকে আমরা যথেষ্ট শিক্ষা গ্রহণ করেছি বলে মনে হয় না। যাদের এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার কথা, তারা রয়েছেন চরম উদাসীন। এক দুর্ঘটনার রেশ না কাটতেই আরেক দুর্ঘটনা এসে হাজির হয়। আমরা বেদনাগ্রস্ত ও হতাশ হই। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য মতে, ২০২৩ সালে সারাদেশে ২৭ হাজার ৬২৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব অগ্নিকাণ্ডে ৭৯২ কোটি ৩৬ লাখ ৮২ হাজার ১৪ টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। নিহত হয়েছে ১০২ জন, আহত হয়েছে ২৮১ জন। বস্তুত গৃহস্থালি কাজে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের নতুন অনুমোদন বন্ধ থাকায় এমনকি পল্লি অঞ্চলেও বর্তমানে এলপিজির বিকল্প নেই। ফলে বিশেষত গত দেড় দশকে দেশে এলপিজির রমরমা ব্যবসা চলছে। জানা গেছে, গত এক বছরে এলপিজি সিলিন্ডার আমদানি করা হয়েছে ৬ লাখের বেশি। এলপিজি ছাড়া অন্যান্য সিলিন্ডার আমদানি করা হয়েছে ৩ লাখের বেশি। পাশাপাশি দেশেও সিলিন্ডার নির্মাণের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেয়া হয়েছে। অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান বাজারজাত করছে দেশে নির্মিত সিলিন্ডার। কিন্তু এসব সিলিন্ডারের মান পরীক্ষার জন্য অনুমোদিত কোনো পরীক্ষা কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। লোয়াবের তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে ৬০ লাখের বেশি গ্রাহক এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করেন। এ গ্রাহকের একটি বড় অংশই গ্রামাঞ্চলের। এ মুহূর্তে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৩০টি কোম্পানির অন্তত দুই কোটি সিলিন্ডার বাজারে রয়েছে। দেশের সর্বত্র গ্যাস সিলিন্ডার নামের এই বোমার ব্যবহার থাকলেও এসব সিলিন্ডারের মান নিয়ন্ত্রণে কারো যেন দায় নেই। এই সুযোগে মানহীন সিলিন্ডার বাজারে ঢুকে পড়ছে এবং এগুলোই দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। মনে রাখতে হবে, এ দুর্ঘটনা রোধে ব্যক্তি সচেতনতা বাড়ানোসহ এ ব্যাপারে রাষ্ট্রেরও গভীরভাবে মনোযোগ দিতে হবে। সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগই কেবল পারে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।