দায়ীদের কোনো ছাড় নয়

0
17

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। গত বছর দেশে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে ৫১৩ শিক্ষার্থী। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আত্মহত্যা করা মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ছাত্রী ৬০ দশমিক ২ শতাংশ। এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্মহত্যার সংখ্যা বেশি ঢাবি ও চবিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬ জন, সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ জন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ জন, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ২ জন, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ও অন্যান্য ১৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছর ৫ জন করে শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এসব আত্মহত্যার পেছনে রয়েছে পারিবারিক বিভেদ, পড়াশোনার চাপ, ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে অভিমানসহ বিভিন্ন রকমের হতাশা। প্রসঙ্গত গত শুক্রবার রাতে ফাইরুজ অবন্তিকা নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। মৃত্যুর আগে ২৪ বছর বয়সী এ তরুণী একটি সুইসাইড নোট লিখে গিয়েছেন। সেখানে তিনি তার একজন সহপাঠী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী প্রক্টরকে মৃত্যুর জন্য দায়ী করে গেছেন। তিনি সুইসাইড নোটে লিখেছেন- ‘আমার ওপর দিয়ে কী গেলে আমার মতো নিজেকে এত ভালোবাসে যে মানুষ সে মানুষ এমন কাজ করতে পারে। আমি জানি এটা কোনো সলিউশন না, কিন্তু আমাকে বাঁচতে দিতেছে না বিশ্বাস করেন। আমি ফাইটার মানুষ। আমি বাঁচতে চাইছিলাম!… এটা সুইসাইড না, এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার।’ ওই সহপাঠীর পক্ষ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহকারী প্রক্টরও কী পরিমাণ তাকে ধারাবাহিক মানসিক নিপীড়ন চালিয়ে গেছে- এমন অভিযোগ সুইসাইড নোটটিতে আমরা দেখতে পাই। অবন্তিকার মায়েরও অভিযোগ, বিচার না পেয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন তার মেয়ে। এ ঘটনায় গত শনিবার দিনভর উত্তাল ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। অবন্তিকার সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। দেশের আইনে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দান করা একটি অপরাধ। আইনে এটাও বলা আছে, আত্মহত্যাকারীর মৃত্যুর আগে রেখে যাওয়া সুইসাইড নোট প্ররোচনা দানকারীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য হবে। তবে সুইসাইড নোটের সমর্থনে আরো সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। পরিবার, সমাজ, প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র সবকিছুই তো এখন বিষাদগ্রস্ততা সরবরাহের পাইপলাইন। যার কারণে আত্মহত্যার জন্য যতটা না ব্যক্তি দায়ী করে, তার চেয়ে বেশি পরিবার, সমাজ, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রের দিকেই আঙুল তোলে বেশি। এসবই কোনো না কোনোভাবে ব্যক্তিকে বাধ্য করে আত্মহত্যা করতে। অনেকাংশে ঘটনাগুলোর প্রতিরোধ সম্ভব। তবে এ নিয়ে সরকারি-বেসরকারি কোনো উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি না। এ জায়গায় এখনও আমাদের ঘাটতি রয়েছে। বাবা-মাকে সচেতন করার বিষয় আছে। আত্মহত্যার ব্যাপারটি মাথায় রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও বিশেষ পদক্ষেপ নিতে পারে। তারা চাইলে এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থাসহ উইং চালু করে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। আত্মহননের মতো চরম সিদ্ধান্ত নেয়ার পরিস্থিতি উদ্ভব হওয়াটা অনভিপ্রেত নয়। এ ব্যাপারে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ভূমিকা অবশ্যই থাকা প্রয়োজন। পরিশেষে আশা করি, অবন্তিকার আত্মহত্যার সব দিক খতিয়ে দেখে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে এবং আত্মহত্যার মতো ঘটনা কমিয়ে আনতে সর্বমহল সচেতন হবে।