অর্থ পাচার রোধ ও নিয়ন্ত্রণ জরুরি

0
16

কোনোভাবেই অর্থ পাচার রোধ করা যাচ্ছে না। নানাভাবে বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশ থেকে অর্থ পাচার বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। এর ৮০ শতাংশই হয়েছে ব্যাংকের মাধ্যমে। রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর দুর্বল নজরদারি ও আইনের শাসনের ঘাটতির কারণে পাচার থামছে না বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এ পর্যন্ত অর্থ পাচার রোধে যত কথা হয়েছে, সে অনুপাতে কি কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? হয়নি। অর্থ পাচার রোধ কঠিন বিষয় নয়। সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সব বিভাগেরই যদি সমতৎপরতা থাকে এটি রোধ করা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গেøাবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর অর্থ পাচারের পরিমাণ বাড়ছে। জানা গেছে, দেশ থেকে যত অর্থ পাচার হয়েছে তার ৮০ শতাংশই হয়েছে ব্যাংকের মাধ্যমে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৪ হাজার ১০৬টি সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব লেনদেনে অর্থের পরিমাণ ছিল ২২ লাখ ৮৫ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি। একই অর্থবছরে অর্থ পাচারের ৫৯টি মামলা হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গত দুবছরে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে অর্থ পাচার। আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ব্যাংক ঋণে জালিয়াতির ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এ সময় বিএফআইইউর অনুসন্ধানে ১ হাজার ১১২টি সন্দেহজনক লেনদেন ধরা পড়েছে। প্রতিবেদনে ব্যাংক ঋণে ছয় ধরনের জালিয়াতি শনাক্ত করা হয়েছে। ভুয়া নথি ও ভুয়া জামানতের মাধ্যমে ঋণ অনুমোদন ও বিতরণের তথ্যও উঠে এসেছে। পাচার হওয়া এই অর্থের পরিমাণ একই সঙ্গে আতঙ্ক এবং উদ্বেগের। কারণ যে পরিমাণ টাকা পাচার হয়েছে, তার বড় উৎস দুর্নীতি। দুর্নীতি ছাড়া এ পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা সম্ভব হয়নি। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি, কিন্তু সেই উদ্দেশ্য কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলার সুযোগ তৈরি করছে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ। বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে আলাপ-আলোচনার কথাও শোনা যায় জোরেশোরে। কিন্তু কার্যত সেই উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। মাত্র একবার ২০০৭ সালে আমরা একটি ঘটনায় মাত্র ২১ কোটি টাকা ফেরত আনার কথা জেনেছি। এরপর এ ধরনের উদ্যোগ আর নেয়া হয়নি বা হলেও তার সফলতার খবর আমরা জানতে পারিনি। আমরা ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হব এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার আশা করছি। দেশে যে হারে দুর্নীতির বিস্তার ঘটেছে এবং এর মাধ্যমে অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে, তাতে এসব লক্ষ্য অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, উন্নত দেশে পরিণত হতে হলে আবশ্যিকভাবেই কয়েকটি বিষয়ের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। গণতন্ত্র, সুশাসন, ন্যায়বিচার, বৈষম্য হ্রাস এবং বাসযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। দেশ থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে, অথচ তা রোধ করা যাচ্ছে না, এটা কোনোভাবে বরদাশত করা যায় না। অর্থ পাচার রোধে অবশ্যই পাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।