আইনের আওতায় আনতে হবে মূল হোতাদের

0
16

পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার নতুন কিছু নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে নকলের এই মাধ্যমগুলো। বিশেষ করে বর্তমানে বেশির ভাগ নিয়োগ পরীক্ষা এসবের কারণে প্রতিনিয়ত প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। কার্ডের প্রলেপ দেয়া একটি বিশেষ ইলেকট্রনিক ডিভাইস, যা দেখতে অবিকল ব্যাংকের ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মতো। এ ডিভাইসের ভেতরে থাকে মোবাইল সিম। এর মাধ্যমে বাইরে থেকে আসা কল রিসিভ করা গেলেও কল করা যায় না। ডিভাইসটির সঙ্গে আছে একটি ছোট্ট বল্টুর মতো ইয়ারপিন, যা কানে লাগিয়ে ওই ডিভাইসে আসা কল রিসিভ করে কথা বলা যায়। পরীক্ষার্থী কৌশলে সেই কল রিসিভ করে প্রশ্ন জানিয়ে দেয় বাইরে থাকা এ চক্রের সদস্যদের। এরপর বাইরে থেকে ওই প্রশ্নের উত্তর দ্রুত বের করে ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হয়। এসব ডিভাইস ব্যবহার করেই বিসিএস, মেডিকেল, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ও সরকারি ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির মাধ্যমে চাকরি প্রার্থীকে পাস করিয়ে দেয় একটি চক্র। সম্প্রতি তিন পর্বে চলমান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ঘিরে তৎপর হয়ে ওঠে একটি সিন্ডিকেট। র‌্যাবের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, কয়েকটি ভাগে চক্রগুলো এমন প্রতারণা চালায়। এক গ্রুপ নিয়োগ পরীক্ষা-সংক্রান্ত খোঁজখবর নেয়, অন্য গ্রুপ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সরকারি বা বেসরকারি চাকরিপ্রত্যাশীদের খুঁজে বের করে ১০ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে পরীক্ষায় পাস করানোর নিশ্চয়তা দিয়ে অগ্রিম টাকা নেয়। আরেক গ্রুপ পরীক্ষা কেন্দ্রের কোনো এক কর্মচারীকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে। এভাবেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রগুলো। গতকাল ভোরের কাগজে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদের নিয়োগ পরীক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইসের জালিয়াতি ঠেকাতে অভিনব এক যন্ত্র বানিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েট। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় সুরক্ষা নামে যন্ত্রটি পরীক্ষায় জালিয়াতির ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারকারীকে চিহ্নিত করবে। পরীক্ষার হলে কোনো পরীক্ষার্থীর কানে বা অন্য কোন অঙ্গে কোনো ডিজিটাল ডিভাইস ঢুকানো থাকলে এ যন্ত্র সংকেত দেবে। যন্ত্রের একটি লাইট জ্বলে উঠবে এবং শব্দ সংকেত বেজে উঠবে। গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, এ যন্ত্রে ৫০ শতাংশ সফলতা পাওয়া গেছে। সে জন্য আগামী ২৯ মার্চ পরীক্ষামূলকভাবে যন্ত্রটির ব্যবহার শুরু হবে এবং খুব শিগগির এর শতভাগ ব্যবহার শুরু হবে। সফল হলে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তর ডিজিটাল জালিয়াতি রোধে এ যন্ত্র ব্যবহার করবে। আমরা জানি, পরীক্ষাকেন্দ্রে হাতঘড়ি বা যে কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কমিউনিকেটিভ ডিভাইস, জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্ট কার্ড) ছাড়া কোনো প্রকার ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড অথবা অন্য কোনো কার্ড বা এ জাতীয় বস্তু সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করা বা সঙ্গে রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদি কোনো পরীক্ষার্থী এসব দ্রব্য সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করেন, তবে তাকে তাৎক্ষণিক বহিষ্কারসহ সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রত্যাশা করি নতুন এই উদ্যোগ সফল হবে এবং অনিয়মের আশ্রয় নেয়া কোনো পরীক্ষার্থী ছাড় পাবে না। পাশাপাশি আশা রাখি প্রশাসন এসব জালিয়াতি চক্রের মূল হোতাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবে।