রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জরুরি

0
24

গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেই বললেই চলে। যা খুবই দুঃখজনক। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদররা বিশ্বের সবচেয়ে বর্বরোচিত ও বৃহত্তম গণহত্যা চালায় এই ভূখণ্ডে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এসেও এই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে কুখ্যাত অভিযানে কালরাতের প্রথম প্রহরে তারা শুরু করে গণহত্যা। রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স, পিলখানার ইপিআর ব্যারাক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস, শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারসহ ঢাকা এবং সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে তারা হত্যাযজ্ঞ চালায়। নৃশংস এই ঘটনার স্মরণে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা করা হয়। ওই বছর থেকে ২৫ মার্চকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গণহত্যা দিবস পালন করে আসছে বাংলাদেশ। এছাড়া আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেয়ার জন্য একটি বিল পাস করা হয়। এর আগে বেসরকারি উদ্যোগে ২০০১ সালে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস পালনের দাবি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রথমবার তোলা হলেও সরকারি উদ্যোগের অভাবে তা এগোয়নি। গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে কূটনৈতিকভাবে সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে এগোতে হবে। বিশ্ব জনমত গঠনে কাজ করতে হবে। স্বীকৃতি আদায়ের জন্য অন্তত ৮০টি রাষ্ট্রের সম্মতি প্রয়োজন, ইতোমধ্যে ২০টি রাষ্ট্রের সম্মতি আমরা পেয়েছি। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের গবেষকদের মতে, বিজয়ের গৌরবে গৌরবান্বিত জাতির কাছে গণহত্যার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকেছে বারবার। এ কারণে বহির্বিশ্বে গণহত্যার পৈশাচিক দৃশ্যটি অন্ধকারেই থেকে গেছে। সাত বছর ধরে দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য উদ্যোগ নেয়া হলেও জাতিসংঘ ঘোষিত গণহত্যাবিষয়ক একটি দিবস থাকায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এই স্বীকৃতি পাওয়া। এই অনিশ্চয়তাকে বাধা হতে দেয়া যাবে না। উনিশ শতক থেকে নৃশংস গণহত্যার মধ্যে রয়েছে আর্মেনীয় গণহত্যা, হলোকাস্ট ও ন্যানকিং গণহত্যা, কম্বোডীয় গণহত্যা, একাত্তরের ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের নামে বাঙালি গণহত্যা, বসনীয় গণহত্যা, বেলজিয়ামের রাজা লিওপোল্ডের গণহত্যা এবং সর্বশেষ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা। তবে এর মধ্যে বর্বরোচিত গণহত্যা ঘটেছে বাংলাদেশে একাত্তরের ২৫ মার্চ। গবেষকদের মতে, শুধু ২৫ মার্চের গণহত্যার স্বীকৃতির চেয়ে প্রয়োজন একাত্তরের ৯ মাসের নৃশংস গণহত্যার স্বীকৃতি। এক্ষেত্রে সরকারকে আরো জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা মনে করি, এ বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতা দরকার। গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ের উদ্দেশ্যে গৃহীত কার্যক্রমের গতি আরো বাড়াতে হবে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে একযোগে কাজ করতে হবে। ইতিহাস অনুযায়ী, সংখ্যার দিক থেকে বড় গণহত্যা চালায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের গেস্টাপো বাহিনী। পাঁচ বছরে তারা প্রায় ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করে। গেস্টাপো বাহিনীর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় বছরে গড়ে প্রায় ১২ লাখ মানুষ। অন্যদিকে বাংলাদেশে মাত্র ৮ মাস ২২ দিনে পাকসেনারা হত্যা করে ৩০ লাখ মানুষ। সব বিচারেই পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশের গণহত্যা বিশ্বের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ গণহত্যা, সন্দেহ নেই। আমরা জেনেছি, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য বিশেষভাবে কাজ করছেন বিদেশে বসবাসরত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কিছু মানুষ। অথচ গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জরুরি। এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে দীর্ঘপরিকল্পনা ও বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন।