দুর্নীতির অভিযোগে কোণঠাসা তৃণমূল, উজ্জীবিত বিরোধীরা

0
3

প্রতিদিনের ডেস্ক:
ভারতে ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ এরই মধ্যে শেষ। বাকি এখনো ছয় দফা। কিন্তু নির্বাচন যত সামনের দিকে এগোচ্ছে, ততই দুর্নীতি ইস্যুতে সরগরম হয়ে উঠছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি। এই ইস্যুতে রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসকে কোণঠাসা করতে চাইছে প্রধান বিরোধী দল বিজেপিসহ কংগ্রেস, সিপিআইএমের মতো দলগুলোও।২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্ন দুর্নীতিকাণ্ডে নাম জড়াতে থাকে তৃণমূল কংগ্রেসের। কখনো ‘নারদা’ স্ট্রিং অপারেশনে দলের মন্ত্রী-নেতাদের হাত পেতে টাকা নিতে দেখা গেছে, কখনো নাম জড়িয়েছে সারদা, রোজ ভ্যালির মতো চিটফান্ডের অর্থ কেলেঙ্কারিতে। সেই সঙ্গে রয়েছে গরুপাচার, বালিপাচার, রেশন দুর্নীতি, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মতো ভুরি ভুরি অভিযোগ।দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, অনুব্রত মণ্ডল, মানিক ভট্টাচার্যের মতো হেভিওয়েট নেতা ছাড়াও তৃণমূলের একাধিক বিধায়ক, জেলা সভাপতি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে তৃণমূলের মন্ত্রীদের চোর অপবাদও শুনতে হচ্ছে।এমন অবস্থায় সামনে এসেছে স্কুল শিক্ষক নিয়োগে বেআইনি চাকরি বাতিলের নির্দেশ। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে চাকরি গেছে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীর। বেআইনি নিয়োগ সংক্রান্ত এক মামলায় গত সোমবার (২২ এপ্রিল) বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মো. শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেন, আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে বেআইনিভাবে চাকরিপ্রাপকদের বেতনের টাকা সুদসহ ফেরত দিতে হবে।আদালতের এই রায়ের পরেই রাজ্যজুড়ে শোরগোল পড়ে গেছে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বাস, ট্রেন, বাজার- সবখানে এ নিয়ে আলোচনা। নির্বাচন চলাকালীন এমন একটি দুর্নীতির ইস্যু সামনে আসায় বিরোধী দলগুলোও সেটি থেকে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে। নির্বাচনী প্রচারণায় একের পর এক আক্রমণ শানাচ্ছে তৃণমূলকে লক্ষ্য করে।গত মঙ্গলবার রায়গঞ্জে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে নির্বাচনী প্রচারণায় এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, আদালত ২০১৬ সালের শিক্ষক নিয়োগের প্যানেল বাতিল করেছেন। এটি খুবই লজ্জার যে, লাখ লাখ রুপির বিনিময়ে চাকরি বিক্রি হয়েছে। চাকরির জন্য তারা ১০ থেকে ১৫ লাখ রুপি নিয়েছে। অর্থাৎ, আপনার কাছে ১০-১৫ লাখ রুপি না থাকে তাহলে আপনার ভাই বা ছেলে চাকরি পাবে না।বিজেপি নেতার দাবি, এ রাজ্যে যে কাটমানি সিন্ডিকেট চলছে, কেবল বিজেপি’ই পারে তা শেষ করে দিতে। উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, পশ্চিমবঙ্গে এই কাটমানি সংস্কৃতি, চাকরিতে দুর্নীতি কি থামানো উচিত নয়? মমতা দিদি কি এই দুর্নীতি রুখতে পারবেন? না! কেবল বিজেপি সরকারই পারে এটি বন্ধ করতে।একই দিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরণ রিজিজু শিলিগুড়ির জনসভায় বলেন, পশ্চিমবঙ্গে যত মন্ত্রী এবং দপ্তর রয়েছে, সবাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। এ রাজ্যে যত অবৈধ রুপি উদ্ধার হয়েছে, আর কোনো রাজ্যে তা হয়নি।হাইকোর্টের রায়কে হাতিয়ার করে মঙ্গলবার সকাল থেকে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের বাম প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন, যেসব অযোগ্য চাকরিপ্রার্থী তৃণমূল নেতাদের রুপি খাইয়ে চাকরি পেয়েছেন, তাদের সেই রুপি ফেরতের দাবি করা উচিত। প্রয়োজনে আমরা তাদের সঙ্গে যাবো।একদিকে আদালতের রায়, অন্যদিকে বিরোধীদের আক্রমণ- দুইয়ে মিলে কার্যত দিশেহারা হয়ে পড়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জী।ভুল হয়েছে স্বীকার করে মমতা বলেন, ভুল যে কারও হতে পারে। সব কি আমি করি? না। আপনারা চাকরিগুলো না খেয়ে যদি বলতেন, কিছু ভুল হয়েছে, সংশোধন করে নাও, আমরা করে নিতাম।বিরোধীদের পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ভারতে বেকারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আর আমরা যখন চাকরি দেই, তখন আদালতকে দিয়ে আপনারা (বিজেপি) সেই চাকরি খেয়ে নেন। কারণ বিচারপতিরা আমাদের অধীনে নন, আপনাদের অধীনে।নিয়োগ বাতিলে আদালতের এই রায়কে ‘বেআইনি’ আখ্যা দিয়ে এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।