সেন্ট্রাল উইমেনস কলেজ টেস্টে ২ বার ফেল, তবুও এইচএসসিতে অংশ নিতে তদবির ৮৫ ছাত্রীর

0
5

প্রতিদিনের ডেস্ক
প্রথমবর্ষ থেকেই ক্লাসে অনিয়মিত। নির্বাচনী পরীক্ষায়ও ফেল। অভিভাবকদের দাবির মুখে বিশেষ বিবেচনায় নেওয়া হয় পুনঃনির্বাচনী পরীক্ষা। তাতেও ফেল। তবুও হাল ছাড়ছেন না ছাত্রী ও অভিভাবকরা। এখন ধরনা দিচ্ছেন ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে। এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে জোর তদবির চালাচ্ছেন ৮৫ ছাত্রী ও তাদের অভিভাবক।
দুই দফা নির্বাচনী পরীক্ষায় ফেল করেও এইচএসসিতে অংশ নিতে এমন তদবির চালানো ছাত্রীরা রাজধানীর টিকাটুলীর সেন্ট্রাল উইমেনস কলেজের শিক্ষার্থী। ফেল করায় কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অনুমতি দেয়নি। ফরম পূরণের সুযোগও পাচ্ছেন না তারা।
জানা গেছে, কলেজ কর্তৃপক্ষের সাড়া না পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দিনভর ওই ছাত্রীরা ঢাকা বোর্ডে ঘোরাঘুরি করেন। কান্নাকাটি করে ফরম পূরণের সুযোগ দিতে বোর্ডের অনেক কর্মকর্তার কাছে অনুরোধ করেন। সঙ্গে তাদের অনেকের অভিভাবককেও দেখা যায়। তবে দিনশেষে ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেছেন।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার তাদেরকে জানান, নির্বাচনী পরীক্ষায় ফেল করলে বোর্ডের কিছু করার নেই। এ নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটাই চূড়ান্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ৩০ জুন থেকে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হবে। এ পরীক্ষার আগে কলেজে নির্বাচনী পরীক্ষা নিয়েছে স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ওই নিয়ম মেনে সেন্ট্রাল উইমেনস কলেজেও নির্বাচনী পরীক্ষা হয়। তাতে ৪৫০ জন ছাত্রী অকৃতকার্য (ফেল) হন।অভিভাবকদের দাবির মুখে পরে ওই ছাত্রীদের জন্য বিশেষ বিবেচনায় পুনঃনির্বাচনী পরীক্ষা নেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাতেও ৯০ জন ফেল করেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন ছাড়পত্র নিয়ে কলেজ থেকে চলে গেছেন। বাকি ৮৫ জন ছাত্রীর অভিভাবক ফেল করা বিষয়গুলোতে পুনরায় আরও একটি নির্বাচনী পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানান।
অভিভাবকদের চাপের মুখে কলেজ কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে জরুরি সভা করে। সেখানে শিক্ষকরা তৃতীয় দফা নির্বাচনী পরীক্ষা নিতে আপত্তি করেন। এরপর কলেজ কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দেয়, ফেল করাদের ফরম পূরণ করতে দেওয়া হবে না। আগামী বছর নির্বাচনী পরীক্ষা দিয়ে পাস করলেই কেবল তারা এইচএসসিতে অংশ নিতে পারবেন। এরপর ঢাকা বোর্ডে ধরনা দিতে শুরু করেন ছাত্রী ও অভিভাবকরা।
ফেল করেও পরীক্ষায় অংশ নিতে আগ্রহী এক শিক্ষার্থী সহপাঠীদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার ঢাকা বোর্ডে আসেন। অনেক কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেও কোনো কাজ হয়নি। তিনি বলেন, পদার্থবিজ্ঞানসহ কয়েকটি বিষয়ে ফেল করেছি। আরেকবার টেস্ট পরীক্ষা নিলে আমরা পাস করবো। কিন্তু কলেজের স্যাররা সেই সুযোগ দিচ্ছেন না। এজন্য আমরা বোর্ডে এসেছি।
আসলাম হোসেন নামে এক অভিভাবক বলেন, ওদের জীবন থেকে একটা বছর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ওরা মূল পরীক্ষা দিলে পাস করে যাবে হয়তো। ওদেরকে সুযোগটা দেওয়া উচিত। ভালো প্রস্তুতি নিলে এ দুই মাসে ফেল করা বিষয়ে পাস করা খুব কঠিন হবে না।
তবে সেন্ট্রাল উইমেনস কলেজের অধ্যক্ষ সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ফেল করা ছাত্রীরা প্রথমবর্ষ থেকেই ক্লাসে অনিয়মিত। তাদের ৪০ শতাংশ উপস্থিতিও নেই। বারবার তাগাদা দিলেও তারা কলেজে আসেনি।’ তাদের অভিভাবকদের মিটিংয়ে ডাকলেও অনুপস্থিত থাকতেন বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথম যে নির্বাচনী পরীক্ষা নিয়েছি, সেখানে প্রায় সাড়ে চারশ ছাত্রী ফেল করেছিল। পরে কলেজে সভা করে সিদ্ধান্ত হয় যে পুনঃনির্বাচনী পরীক্ষা নেওয়া হবে। শর্ত দেওয়া হয়, যদি পুনরায় নেওয়া নির্বাচনী পরীক্ষায় কোনো ছাত্রী ফেল করে তাকে আর কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। এ মর্মে অঙ্গীকারনামায় সই করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এরপরও দেখা যায় ৯০ জন ফেল করেছে।’
অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘ফেল করাদের মধ্যে পাঁচজন ছাড়পত্র নিয়ে চলে গেছে। বাকিরা কলেজে এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। বাধ্য হয়ে আমি গত ২৪ এপ্রিল আবার শিক্ষকদের মিটিং ডাকি। সেখানে শিক্ষকরা জানান, এ ছাত্রীরা আবার পরীক্ষা দিলেও ফেল করবে। এটা তারা লিখিত আকারে দিতে পারেন বলেও উল্লেখ করেন। শিক্ষকদের এমন আপত্তির মুখে আরেক দফা পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তোমরা ভালো করে পড়ো, পরের বছর নির্বাচনী পরীক্ষা দিয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিও।’