অর্ধশত কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট গদখালীর চাষিদের

0
11

এমামুল হাসান সবুজ, ঝিকরগাছা
যশোরের নাভারনের ফুল চাষিরা বেজায় খুশি। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে পাঁচটি দিবসকে কেন্দ্র করে তারা অর্ধশত কোটি টাকা ফুল বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন। ফেব্রুয়ারি মাসে বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং মার্চে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও মহান স্বাধীনতা দিবস। এসব দিবসগুলো ঘিরে গোটা দেশেই থাকে ব্যাপক ফুলের চাহিদা। এ চাহিদার বেশির ভাগ পূরণ করে ফুলের রাজধানী নাভারণের গদখালীর ফুল চাষিরা। আর চাহিদার কারণে গদখালীতে এবার তিনগুণ বেড়েছে ফুলের দাম। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, নাভারণ ও পানিসারা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে বর্তমানে রয়েছে নানাজাতের ফুল। এই অঞ্চলের কৃষকরা ধান ও পাটসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ না করে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করেন। এসব ফুলের মধ্যে রয়েছে গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গাঁদা, লিলিয়াম, জিপসি, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ডজন খানেক ফুল। এসব গ্রামের মাঠের পর মাঠে এখন দোল খাচ্ছে ফুল। যেন ফুলের বাগানে পরিণত হয়েছে গ্রামগুলো। এদিকে, দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করেছে বসন্তবরণ উৎসব। একইদিনে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের স্বরস্বতী পূজা। এরপরই আসছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এসব দিবসগুলো উদযাপনে ফুলের বিকল্প নেই। তাই ফুলের রাজধানী যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী-পানিসারা-হাড়িয়া অঞ্চলের ফুলচাষিরা নিচ্ছেন শেষ সময়ের প্রস্তুতি। ক্ষেতের ফুলগাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। মূলত এই তিনটি দিবস ঘিরে জমে উঠতে শুরু করেছে গদখালীর ফুলবাজার। অন্য সময় থেকে বেশি দামে ফুল বিক্রি হওয়ায় এসময় ফুলগাছের বাড়তি যতœ নেন কৃষকরা। সময় যত ঘনিয়ে আসছে পাইকারি বাজারে ফুলের দামও ততো বাড়ছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে এ বাজারে ফুলের দাম বেড়েছে তিনগুণ। ফুলচাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চলতি মাসে এই তিন দিবসসহ মার্চে দুটি দিবস মিলে অর্ধশত কোটি টাকার বেশি ফুল বিক্রি হবে। কৃষি বিভাগ বলছে, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের পাঁচটি দিবস ঘিরে গদখালী এলাকা থেকে অর্ধশত কোটি টাকার ফুল সারাদেশে সরবরাহ করার প্রস্তুতি রয়েছে। যদিও কৃষকের প্রত্যাশা ফেব্রুয়ারিতেই তারা অর্ধশত কোটি টাকার ফুল বিক্রি করতে সক্ষম হবেন। আসন্ন দিবসগুলোর বাজার ধরতে প্রতিদিন কাকডাকা ভোরেই চাষিরা বিভিন্ন যানবাহনে তাদের উৎপাদিত ফুল নিয়ে আসছেন পাইকারি মোকাম গদখালী বাজারে। ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে সরব হয়ে উঠছে ফুলবাজার। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দু’পাশে বিভিন্ন জাতের ফুলের পসরা সাজিয়ে বসছেন কৃষকরা। কেউ ভ্যান, কেউ সাইকেল, মোটরসাইকেল বা ঝুড়ির মধ্যে ফুল রেখে ঢাকা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দরদাম করছেন। সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) গদখালি বাজারে প্রতি পিস ভালোমানের গোলাপ বিক্রি হয়েছে ১২ থেকে ১৫ টাকা দরে। যা এক সপ্তাহ আগে যা বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১২ টাকায়। প্রতিপিস রজনীগন্ধা বিক্রি হয়েছে ৮-১০ টাকায়, যা আগে ছিল ৫-৮ টাকা। রঙিন গ্লাডিওলাস প্রতিটি মানভেদে বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১৩ টাকা, যা আগে ছিল ৮-১০ টাকা। জারবেরা বিক্রি হয়েছে ৬ থেকে ৮ টাকা। তবে কৃষক বলছেন, এ বছর জারবেরার উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম অপরিবর্তিত আছে। ফুল বাঁধাইয়ের জন্য কামিনীর পাতা বিক্রি হয়েছে প্রতি আঁটি ২০ টাকায়। জিপসির আঁটি বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকায়। যা আগে ছিল ১৫-২৫ টাকা। মালা গাঁথার জন্য চন্দ্রমল্লিকা বিক্রি হয়েছে প্রতি ১০০ ফুল ২০০ টাকা। গাঁদা ফুল বিক্রি হয়েছে প্রতি হাজার ২৫০-৩০০ টাকায়, যা আগে ছিল ১০০-১৫০ টাকা। লিলিয়াম প্রতি পিস বিক্রি হয়েছে ১০০-১৩০ টাকা। দু’দিন আগেও যার দাম ছিল ১০০ টাকা। পানিসারা গ্রামের সোবহান আড়াই বিঘা জমিতে জারবেরা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, এ বছর ফুলের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। জারবেরা ৮-১০ টাকায় বিক্রি করছি। আগামী দুই-তিন দিনে দাম আরও বাড়বে। টাওরা গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম ৯ কাঠা জমিতে গোলাপ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে গোলাপের দাম ছিল ৮-১০ টাকা। এখন ২০ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে। নিমতলা গ্রামের আমির হোসেন ৩০০ পিস গোলাপ বিক্রির জন্য এনেছিলেন। তিনি বলেন, প্রতি ১০০ ফুল তিনি বিক্রি করেছেন ১৬শ’ টাকা। তিনি বলেন, ২ বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করেছি, এবছর পচন রোগের কারণে উৎপাদন কম হয়েছে। তবে দাম বেশি হওয়ায় ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, সারাবছরই গদখালীতে ফুল বিক্রি হয়। তবে মূলত বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে বেচাকেনা বেশি হয়। এ মৌসুমে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বিশেষ করে গোলাপ ফুলের উৎপাদন কম হয়েছে। তারপরও অন্যান্য ফুল উৎপাদন বেশ ভালোই হয়েছে। অবশ্য আসন্ন দিবসগুলোকে ঘিরে অর্ধশত কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা করছে এ অঞ্চলের চাষিরা। ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, ঝিকরগাছা উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ৬৩০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছে। এবার ফুলের আবাদ ভালো হয়েছে, বাজারে দামও ভালো। এ কারণে দু’মাসে এ উপজেলা থেকে অর্ধশত কোটি টাকার ফুল সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।