ডিজিটাল ব্যানারের প্রভাবে হারিয়ে গেছে কাপড়ের ব্যানার

0
10

শাহিনুর রহমান, পাটকেলঘাটা
পাটকেলঘাটার রাস্তাঘাট পোস্টার আর ব্যানারে ঢেকে গেলেও কাপড়ের তৈরি ব্যানারগুলো প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। একইসাথে চাপা পড়েছে এর পেছনে থাকা ব্যানার শিল্পীদের কথাও। সারা বছর টুকটাক ব্যস্ত সময় পার করলেও জাতীয় বা স্থানীয় নিবার্চনে ব্যানার ফেস্টুন তৈরিতে যারা অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করতেন তারা আজ কাজের অভাবে নিজ পেশা ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে। একসময় রংতুলির আঁচড়ে ব্যানার বা সাইনবোর্ড লিখে জীবিকা নির্বাহ করত প্রায় অর্ধশতাধিকের বেশি শৌখিন বা পেশাজিবী আর্ট শিল্পিরা। আধুনিক যুগে ডিজিটাল নির্ভর কর্মক্ষেত্রে ডিজিটাল সাইনবোর্ড বা ব্যানার লিখন কাজের ব্যাপক চাহিদায় কদর কমে গেছে মূল ধারার চারু শিল্পিদের। পাটকেলঘাটায় বর্তমানে কয়েকজন নামে মাত্র টিকে আছেন কোন রকম। আর্ট শিল্পের কথা বলতেই চোখে ভাসে শহরের বাসের গায়ে, ট্রাকের গায়ে, ভ্যান গাড়ীর গায়ে, দেয়ালের গায়ে, শিল্পীদের মনের মাধুরি মিশিয়ে আঁকা হরেক রকমের ছবি। ছিনেমা হলগুলোর সামনে টাঙ্গানো চলমান সিনেমার দৃশ্য আঁকা হতো শিল্পীর রং তুলিতে। বিভিন্ন সভা সমাবেশে কাপড়ের উপর হাতের লেখা সেই নিপুন ব্যানার এখন অতীত হয়ে গেছে। একসময় যাদের রংতুলির আঁচড়ে নানা ধরনের ব্যানারের লেখা শোভা পেত সড়কের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে আবার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড থেকে শুরু দেয়ালিকায় শোভা পেত বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক বার্তা তারা আজ হারিয়ে যেতে বসেছেন। এসব স্থানে তাকালে এখন আর দেখা মিলেনা এসব শিল্পের। যান্ত্রিকতার এই যুগে হারিয়ে যাচ্ছে রং আর তুলির কারুকাজ ও এর সাথে জড়িত শিল্পিরা। এখন অল্প টাকায় স্বল্প সময়ে প্যানা পেন্টাক্সের তৈরি বিভিন্ন ধরনের ব্যানার ফেস্টুন পাওয়া যাচ্ছে। আবার ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা ঝুঁকছেন ডিজিটাল ব্যানারে দিকে। শহর ছাড়িয়ে এখন গ্রামেও ডিজিটাল ব্যানার লিখনের কাজ প্রসার লাভ করেছে। জীবিকা নির্বাহের প্রতিযোগিতায় রং তুলি ছেড়ে শিল্পিরা ঝুঁকে পড়ছেন অন্য পেশায়। তারপরও যারা এ পেশা আঁকড়ে জীবিকা অর্জনে টিকে থাকলেও নেই তেমন একটা ভাল অবস্থানে। দেয়ালে কাপড় টানিয়ে ব্যানার লিখন, আঁকাঝোকার কাজ ও প্রতিষ্ঠানে দেয়াল লিখন কাজের পরিবর্তে দেখা যাচ্ছে ডিজিটাল ব্যানার। সর্বোপরি, শত প্রতিকুলতার মাঝেও থানার পথে ঘাটে কোন কোন জায়গায় এখনো দেখা মিলছে রং তুলি দিয়ে কাজ করা গ্রাম বাংলার এক সময়কার চিরচেনা আর্ট শিল্পিদের। শিল্পি এস এম লিয়াকত হোসেন জানান, এখন সর্বত্র ডিজিটাল ব্যানারের প্রভাবে সাইনবোর্ড, ব্যানার লিখনের কাজ তেমন একটা আসেনা বললেই চলে। তবে, এখনো পথে ঘাটের দেয়ালসহ বিদ্যালয়ের দেয়াল লিখনের কাজে তাদের কিছুটা চাহিদা থাকায় পেশা আকড়ে বেঁচে আছে। হাতে লেখার ব্যানারটির স্থায়িত্ব অনেক বেশি থাকলেও ডিজিটালের ব্যানার প্রাকৃতিক নানান কারনে অল্পতেই শেষ হয়ে যায়। তাছাড়া, ডিজিটাল ব্যানারে কোন ভুল হলে ঠিক করার কোন উপায় না থাকলেও হাতে লেখা ব্যানারে ভুল ধরা পড়লেই তৎক্ষনাত ঠিক করা সম্ভব। প্রিন্টের থেকে হাতে লেখা ব্যানারের খরচ অনেক বেশি পড়ে। কেননা সবকিছুর দাম বেশি। আগে যে রঙের ডিব্বা পাওয়া যেত ১০০ টাকা, সেটা এখন তিন শ’ হয়ে গেছে। মুকুল আর্টের মালিক বলেন, ‘ হাতে লেখা সবকিছু উঠে গেছে। বিলবোর্ড, ব্যানার, লিফলেট সব কিছুতে ডিজিটাল চলছে। কম সময়ে অনেক সুন্দর জিনিস পাচ্ছে। হাতে লেখার কাজে তাদের আর কোনো ইন্টারেস্ট নেই।’ অর্ডার কম আসার পেছনে মূল কারণ ক্রেতার চাহিদা। ক্রেতারা সাধারণত তাদের জন্য সুবিধাজনক জিনিসই অর্ডার করেন। খরচের পাশাপাশি সময় আর ডিজাইনের ফ্লেক্সিবিলিটির সুবিধাও ডিজিটাল প্রিন্টের ব্যানারে পাওয়া যায়, যেটি পাওয়া যায় না কাপড়ের ব্যানারের ক্ষেত্রে।