দু পক্ষের সংঘর্ষের জেরে জরুরী বিভাগে ঢুকে হামলা পিটিয়ে চিকিৎসাধীন রোগীর হাত ভাঙলো প্রতিপক্ষ

0
13

উৎপল মণ্ডল, শ্যামনগর
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে হামলা হয়েছে। আগে থেকে সেখানে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজনরা চিকিৎসা নিতে আসা প্রতিপক্ষের উপর এ হামলা চালায়। এসময় জরুরী বিভাগে অবস্থানরত অপরাপর রোগী ও তাদের স্বজনসহ চিকিৎসা কাজে নিয়োজিতরা আতংকিত হয়ে পড়ে। ঘটনাটি ঘটে ৪ই মে শনিবার রাত সাড়ে দশটার দিকে। জরুরী বিভাগের লোহার গেটসহ দরজা জানালা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসা নিতে আসা সিরাজুল ইসলাম (৩৬) নামের ব্যক্তির হাত ভেঙে যায়। পরবর্তীতে জরুরী সেবা নম্বরে খবর পেয়ে শ্যামনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। জানা যায়, শুক্রবার দুপুরে স্থানীয় আবাহনী ক্লাবের মধ্যে গাঁজাসেবনরত তিন তরুন শাহিন নামে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রকে মারপিটের পর জোরপুর্বক গাঁজা সেবন করায়। বিষয়টি জানতে পেরে ঐ শিশুর স্বজনরা শনিবার রাত নয়টার দিকে লাঠিশোটা নিয়ে ক্লাবে ঢুকে হালিম কাগুজী, তার ভাই আবু মুছা, পিতা আব্দুস সাত্তার এবং আলমগীর হোসেনকে পিটিয়ে আহত করে। এসময় আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর প্রায় ৩০ মিনিট পরে মারপিট করতে যেয়ে আহত শাহিনের স্বজনরা চিকিৎসা নিতে জরুরী বিভাগে পৌছে প্রতিপক্ষের হামলার কবলে পড়ে। জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ চিকিৎসা নিতে আসা অপরাপর রোগীরা ছুটাছুটি করতে থাকে। এক পর্যায়ে জরুরী বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক নাজমুল হুদা জরুরী সেবা নম্বরে কল করে সহায়তা চাইলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছায়। শাহিনের মামা আবু জাফর অভিযোগ করেন, শুক্রবার দুপুরে ক্লাবের মধ্যে বসে হালিম, শামিম ও ইব্রাহিম ক্লাবে বসে গাঁজা সেবন করছিল। বিষয়টি দেখে ফেলায় তারা ৬৯ নং বংশীপুর সরকারি প্রাথমিকের ৩য় শ্রেণির ছাত্র শাহিনকে আটকে রেখে মারধর করে জোরপুর্বক গাঁজা টানতে বাধ্য করে। এসময় মোবাইলে থাকা নগ্ন এক নারীর ছবি দেখিয়ে তাকে ‘মা’ও ডাকতে বাধ্য করে। এঘটনার পর বাড়িতে ফিরলেও একদিন পর্যন্ত সে আতংকে কিছু প্রকাশ করেনি। তবে শনিবার অসুস্থ হয়ে পড়লে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তার উপর হওয়া অত্যাচারের ঘটনা জানতে পেরে নালিশ দিতে গেলে তাদের উপর হামলা করে ক্লাবে অবস্থানরতরা। এঘটনার শাহিন ছাড়াও তার নানি খাইরুন্নেছা(৬৩), দাদা আব্দুর রশিদ সর্দার(৬৮), মামা ইব্রাহিম খলিল(২৮) আহত হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসা নিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে জরুরী বিভাগের মধ্যে ঢুকে পিটিয়ে অপর আহত সিরাজুল ইসলামের হাত ভেঙে দেয়া হয়। এদিকে আহত আব্দুস সাত্তারের নিকটাত্বীয় কবির খান বলেন, তারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের বিষয়ে ক্লাবে বসে আলোচনা করছিলেন। একপর্যায়ে আবু জাফরের নেতৃত্বে ইব্রাহিম খলিল ও সিরাজুলসহ ১২/১৪ জন ক্লাবে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় মারাত্বকভাবে আহত চারজনকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর আবু মুছা ও আব্দুস সাত্তারকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। হামলার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে তারা শ্যামনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে শিশু শাহিনের সাথে ঘটনার বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে মিমাংসা করা যেত বলেও তিনি দাবি করেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাডঃ শোকর আলী বলেন, শাহিনের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ করলে দৃষ্টান্তমুলক বিচার করা যেত। বিষয়টি নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে নিজে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। জরুরী বিভাগের চিকিৎসক নাজমুল হুদা বলেন, এভাবে হামলার ঘটনায় চিকিৎসা কাজে জড়িতরা চরমভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। দরজা জানালা ও আসবাবপত্রের কিছু ক্ষতি হলেও সেখানে থাকা রোগীরা চরম আতংকিত হয়ে পড়েছিল। বিষয়টি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে তিনি অবহিত করেছেন। শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইতিমধ্যে উভয় পক্ষ পৃথক দু’টি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।