যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ

0
14

প্রতিদিনের ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পর বেশ কয়েকটি দেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলন। গত মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সবার প্রথম এই বিক্ষোভ শুরু হয়। একপর্যায়ে তা দেশটির অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছড়িয়ে পড়ে। পরে তা ক্যানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্সের মতো দেশগুলোতে বিস্তৃত হতে শুর করে। আসুন দেখে নেওয়া যাক, বিশ্বের কোন কোন দেশে এই আন্দোল চলছে।যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলন চলছে। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে শুরু হয়ে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, এমোরি ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া, ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি, বোস্টনের এমারসন ইউনিভার্সিটি, কানেকটিকাটের ইয়েল ইউনিভার্সিটি, সিয়াটলে হাইস্কুলের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোত ছড়িয়ে পড়ে।ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার মতো এই বিক্ষোভ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার জনকে আটক করেছে মার্কিন পুলিশের বিভিন্ন বিভাগ। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে তাঁবু ভেঙে দেওয়া, শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করা, লাঠিচার্জ ও রাসায়নিক স্প্রে ছিটানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।এদিকে, এ বিষয়ে শেষমেশ মুখ খুলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে তার বক্তব্য শান্তির কোনো আশ্বাস মেলেনি। তিনি স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, দেশের শৃঙ্খলা অবশ্যই সবার আগে প্রাধান্য পাবে।যুক্তরাজ্য গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের শুরু থেকেই যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের দেখাদেখি সেই বিক্ষোভ নতুন গতি পেয়েছে। যুক্তরাজ্যের বিক্ষোভকারীরাও এখন ক্যাম্পাসে তাবু স্থাপন করে অবস্থান নিতে শুরু করেছেন।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলোর সামনের একটি লনে ফিলিস্তিনপন্থিদের একটি ছোট শিবির স্থাপন করা হয়েছে। ইসরায়েলকে প্রতিরক্ষা সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীদারত্বের অবসান চান বিক্ষোভ অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা।নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও লিডস, ব্রিস্টল ও ওয়ারউইকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে তাঁবু টানিয়ে ইসায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা রোধে পুলিশের কঠোর অবস্থানকে সমর্থন করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।ফ্রান্স শুক্রবার (৩ মে) দেশটির শীর্ষ রাজনৈতিক বিজ্ঞান স্কুল সায়েন্সেস পো-তে অবস্থান নেন ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ জোর করে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেন। এমনকি, বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ হলেও প্যারিসের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত ৯১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।অন্যদিকে, প্যারিসের ডাউফাইন ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনের সমর্থনে করতে যাওয়া একটি সম্মেলন নিষিদ্ধ করেছে। এই সম্মেলনের নেতৃত্বে ছিলেন আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ রিমা হাসান। তিনি গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার নিন্দায় প্রথশ থেকেই সোচ্চার। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, এ সম্মেলন জনসাধারণের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারতো।ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ শিক্ষার্থীদের এমন অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করেছেন।জার্মানি শুক্রবার (৩ মে) মধ্য বার্লিনের হামবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে হস্তক্ষেপ করে পুলিশ। জানা গেছে, বিক্ষোভকারীরা অন্য জায়গায় ক্যাম্প করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর তাদেরকে জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়।বার্লিনের মেয়র কাই ওয়েগনার এই প্রতিবাদের সমালোচনা করেছেন। এক এক্স বার্তায় তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বা ফ্রান্সের মতো ঘটনা দেখতে চায় না জার্মানি।
কানাডা গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কানাডার মন্ট্রিল, অটোয়া, টরন্টো, ভ্যাঙ্কুভারসহ বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের হুমকির মুখেও মন্ট্রিলের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে শত শত শিক্ষার্থী দেশটিতে প্রথমবারের মতো ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ শুরু করেন।ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের আর্থিক ও একাডেমিক সম্পর্ক ছিন্ন না করা পর্যন্ত ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীরা তাদের অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের অপসারণ করার উদ্যোগ নিচ্ছে। তাদের দাবি, কিছু বিক্ষোভকারী ম্যাকগিলের কোনো ছাত্র সংগঠনের সদস্য নয়।অস্ট্রেলিয়া শুক্রবার ইউনিভার্সিটি অব সিডনিতে মুখোমুখি অবস্থান নেন ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলপন্থিরা। সে সময় তারা পতাকা নেড়ে নিজেদের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। উভয় পক্ষের মধ্যে কিছু উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই এ বিক্ষোভ চলছে।অস্ট্রেলিয়ার বিক্ষোভকারীরা সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সবুজ লনে তাঁবু টানিয়ে ১০ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি করে আসছেন। তারা চান, অস্ট্রেলিয়া সব ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পাশাপাশি অস্ত্র কোম্পানিগুলোতে অর্থায়ন বন্ধ করুক।
আয়ারল্যান্ড ইসরায়েলবিরোধেী বিক্ষোভ শুরু করেছেন আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত ট্রিনিটি কলেজ শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার তারা কলেজ ক্যাম্পাসে অস্থায়ী শিবির স্থাপন করে ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।মেক্সিকো মেক্সিকোর বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়, ইউএনএএম এর কয়েক ডজন শিক্ষার্থী বৃহস্পতিবার (২ মে) রাজধানীতে একটি ক্যাম্প স্থাপন করেন। তারা চান মেক্সিকান সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করুক।
সুইজারল্যান্ড ইসরায়েলকে একাডেমিকভাবে বয়কট ও গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি ভবনের প্রবেশপথ দখল করে বিক্ষোভ করছেন সুইজারল্যান্ডের লুসান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (২ মে) থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভে প্রায় ১০০জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। তানা জানিয়েছেন, সোমবার (৬ মে) পর্যন্ত তাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান চলবে।