নারীর নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়নে কার্যকর ভূমিকা দরকার

0
23

পালিত হলো বাংলাদেশসহ বিশ্বে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল- ‘নারীর সমঅধিকার, সমসুযোগ এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ।’ নারীর মঙ্গল এবং জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা অর্জন সফল অর্থনীতি এবং একটি সুস্থ গ্রহ তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে হারে নারীর অগ্রগতি হয়েছে সে হারে কমেনি নারীর প্রতি সহিংসতা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটলেও নারীর প্রতি সহিংসতা কমেনি আশানুরূপ। বরং ক্রমান্বয়ে এ সহিংসতা বেড়েই চলেছে। সহিংসতার হার বেড়ে যাওয়া অত্যন্ত উদ্বেগজনক। নির্যাতন-নিষ্পেষণ বন্ধসহ নারীর সব অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৯১১ সাল থেকে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসের মধ্যে সব সীমাবদ্ধ। প্রতিষ্ঠিত হয়নি নারীর অধিকার, বন্ধ হয়নি নির্যাতন। তবে কিছু অগ্রগতি হয়েছে মাত্র। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। অগ্রগতি হয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন সামাজিক সূচকেও। এ সময়ে পরিবর্তন এসেছে নারীর অবস্থা ও অবস্থানেও। বর্তমানে সমাজের প্রায় সব খাতেই নারীর অংশগ্রহণ দৃশ্যমান হচ্ছে। শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে মেয়েদের উপস্থিতি এখন শতভাগ। পোশাকশিল্পের কৃতিত্বের সিংহভাগই নারীর। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশই যেখানে নারী, সেখানে অগ্রগতি দৃশ্যমান হচ্ছে খুব অল্পসংখ্যক নারীর মধ্যেই। নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন ছাড়া দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। সরকার দেশের নারী সমাজের সার্বিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। সরকার নারী শিক্ষার বিস্তার ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কর্মক্ষেত্রে অবাধ প্রবেশ ও নীতি নির্ধারণে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। এরপরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ঘরে-বাইরে নারীর নিরাপত্তা। সম্প্রতি একটি বেসরকারি সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের শতকরা ৮৮ জন নারী রাস্তায় চলার পথে যৌন হয়রানিমূলক মন্তব্যের শিকার হন, যেখানে সিংহভাগ পারপেট্রেটরই গণপরিবহনের চালক ও হেলপাররা। দেশব্যাপী যে হারে ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতেও উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, এ কোন বর্বরতার মধ্যে আমরা বসবাস করছি? ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের খবর যত বেশি পাওয়া যায়, এসব অপরাধের দায়ে অপরাধীদের শাস্তির দৃষ্টান্ত তার চেয়ে অনেক কম। ধর্ষককামীরা এত দিনে জেনে গেছে, ধর্ষণ করলে তাদের খুব একটা সমস্যা হয় না। এর প্রতিকার নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করতে হলে অবশ্যই এর ৫ নম্বর লক্ষ্য অর্জনে সাফল্য দেখাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল একটি বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণ। বাংলাদেশের সংবিধানেও এর প্রতিফলন আছে। কিন্তু ৫০ বছরে কি আমরা বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণ করতে পেরেছি? সিডও সনদের শর্ত বাস্তবায়ন করতে হলেও নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করার কোনো বিকল্প নেই। সর্বোপরি আমরা বলতে পারি যে, নারীর নিরাপত্তা-মর্যাদা ও ক্ষমতায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি আধুনিক কল্যাণমুখী ও কার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে।