নিরাপদ হোক সড়কপথ

0
5

কোনোভাবেই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না। প্রতিদিন সড়কে প্রাণহানির খবর আমরা গণমাধ্যমে পাচ্ছি। সড়কে এই লাশের মিছিল কে থামাবে? গত বুধবার ঝালকাঠিতে ট্রাক, অটোরিকশা ও প্রাইভেট কারের ত্রিমুখী সংঘর্ষে অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন। বরিশাল-পিরোজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ঝালকাঠির গাবখান টোলপ্লাজা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়াও গত মঙ্গলবার ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুরে যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঝরে গেল ১৫ প্রাণ। এর মধ্যে দুই শিশুসহ একই পরিবারের চারজন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১১ জন ঘটনাস্থলে এবং চারজন হাসপাতালে মারা যান। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থেকে পিকআপে করে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন তারা। সকাল সোয়া ৮টার দিকে কানাইপুরের দিকনগর এলাকায় ঢাকা-যশোর আঞ্চলিক মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। শুধু ফরিদপুর নয়, সড়ক দুর্ঘটনায় সাত জেলায় মারা গেছেন মোট ৩৬ জন। ঈদের দিনই সারাদেশে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সারা বছর যতসংখ্যক মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে, এর প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ মৃত্যু শুধু ঈদের মৌসুমে। সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (এআরআই) গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের বেপরোয়া গতি। কিন্তু গতি নিয়ন্ত্রণ, মহাসড়কে ছোট যানবাহন বন্ধ ও বেপরোয়া যানবাহন চলাচল বন্ধে সাফল্য নেই। এখনো দেশের সড়ক-মহাসড়কে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে ১০ লাখ নছিমন-করিমন-ইজিবাইক। অবাধে আমদানি হচ্ছে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। দেশব্যাপী অন্তত ৫ লাখ ফিটনেসবিহীন বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, হিউম্যান হলার অবাধে চলছে। নিবন্ধনবিহীন কয়েক লাখ অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে সড়ক-মহাসড়কে। এসব যানবাহন সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান উৎস। দুর্ঘটনায় দায়ীদের শাস্তির নজিরও তেমন নেই। ফলে চালকরা ইচ্ছামতো গাড়ি চালান। হাইরিস্ক নিয়ে ওভারটেক করেন। এছাড়া চালকদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে, যা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। ফুটপাত দিয়ে মানুষ চলাচলের অবস্থা নেই। কাজেই মানুষ বাধ্য হয়ে মূল রাস্তায় হাঁটছে এবং দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। বাসে সিট বেল্ট বাঁধার ব্যবস্থা, হেলমেট ব্যবহার কম থাকায় ছোটখাটো দুর্ঘটনাতেও প্রাণহানি ঘটছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে সড়ক পরিবহন আইন পাস হলেও তা দীর্ঘদিনেও পুরোপুরি কার্যকর করা যায়নি। পরের বছর নভেম্বরে নতুন আইনটির প্রয়োগ শুরু হলে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। এতে সরকার আইনটি সংশোধনের আশ্বাস দেয়। কিন্তু দীর্ঘ এ সময়ে ঢাকা মহানগরীতে ট্রাফিক পুলিশ সীমিত আকারে আইনের প্রয়োগ করলেও সারাদেশে অনেকটা স্থবির অবস্থা রয়েছে। এখনো হয়নি নতুন আইনের বিধিমালা। হয়নি সংশোধনও। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সমাধানের অযোগ্য কোনো বিষয় নয়। এজন্য দরকার ইতিবাচক চিন্তা ও সমন্বিত পদক্ষেপ। পরিবহন মালিক, শ্রমিকদের পাশাপাশি যাত্রীদের সচেতন হতে হবে এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে।